প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, একসময় দেশের বীমা খাতে অগ্রণী ও পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। কিন্তু পরিবারতন্ত্র, দখলদারিত্ব ও দুর্নীতির কারণে আজ তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
২০১৮ সালে মাফিয়া এস আলম গ্রুপের ছত্রছায়ায় ইউনিয়ন ব্যাংকের পলাতক সাবেক এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে কোম্পানিটি দখল হয়। দখলের পরপরই ছয় শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয় এবং বিভিন্ন শিল্পগ্রুপের প্রতিনিধিকে পরিচালক হিসেবে বসানো হয়। ফলে মাত্র সাত বছরের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
পরিবারকে শীর্ষ পদে বসানো
মোকাম্মেল হক কোনো আইন-কানুন মানেননি। তিনি নিজের ছোট ভাই এ কে এম নাজমুল হক চৌধুরীকে অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর, আরেক ভাই এ টি এম হামিদুল হক চৌধুরীকে উপদেষ্টা এবং ভগ্নিপতি রহিম উদ্দৌলা চৌধুরীকে চিফ কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। অভিজ্ঞতা ও যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও তারা কয়েক লাখ টাকা মাসিক বেতন, গাড়ি, ড্রাইভার, বাসা ভাড়া ও বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন।
কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ
অভিযোগ রয়েছে, গত সাত বছরে মোকাম্মেল হক ও তার পরিবারের সদস্যরা বেতন, ভাতা, মিটিং ফি এবং অন্যান্য খাতে কয়েক শ’ কোটি টাকা লুট করেছেন। এতে কোম্পানি ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়ে এবং বাজারে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতি
শুধু প্রাইম ইসলামী লাইফ নয়, মোকাম্মেল হক এস আলম গ্রুপের হয়ে একাধিক প্রতিষ্ঠানে শীর্ষ পদে থেকে ব্যাংক ঋণ নিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার করেন। ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে একাই তিনি ২৪ হাজার কোটি টাকা এস আলম গ্রুপকে দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী সাইফুল আলম মাসুদের সাথে সম্পর্কের কারণে দীর্ঘদিন এসব অনিয়ম আড়ালে ছিল। সরকার পতনের পর মোকাম্মেল হক পলাতক হন, তার ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করা হয় এবং দুদক তার বিরুদ্ধে মামলা করে।
পতনের দ্বারপ্রান্তে একটি প্রতিষ্ঠান
অযোগ্য নেতৃত্ব, পরিবারতন্ত্র ও দুর্নীতির কারণে একসময় সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠানটি আজ বিনিয়োগকারীদের আস্থা হারাচ্ছে। দ্রুত আইনি ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নিলে প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
