মিসেস শায়লা রহমানের প্রচন্ড মন খারাপ। প্রায় কান্না এসে যাওয়ার মতন মন খারাপ। তার সাথে এটা কিভাবে ঘটলো। তিনি তো কখনো কারো ক্ষতি করেননি। তাহলে কে এমন শত্রুতা করবে উনার সাথে?
এখন সকাল এগারোটা বাজছে। অন্যদিনের মতই উনি দশটার পরে ঘুম থেকে উঠেছেন। কোনো শব্দও পাননি সন্দেহজনক। ঘুম থেকে উঠে চা বানিয়ে খেয়েছেন। ফ্রেশ হয়েছেন। তারপর ড্রয়ইংরুমে গিয়ে জিনিসটা দেখছেন৷ উনার চিৎকারে বাসার সবাই ছুটে এসেছে। সবাই বিস্ফারিত চোখে দেখেছে শায়লা রহমানের অতি পছন্দের ফুলদানিটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে আছে ঘরের মেঝেতে। ফুলদানিটার দাম প্রায় দশ হাজার টাকা। সেবার ব্যাংকক ট্যুরে গেলে কিনে এনেছিলেন৷ এই বাসায় খুব সম্ভবত এই ফুলদানিটাকে শায়লা রহমান সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন। রাগ, দুঃখ আর হতাশার মিশ্র অনুভূতিতে কাপতে লাগলেন শায়লা রহমান।
.
বাসায় এই মুহুর্তে আছে চারজন মানুষ। রমিজ নামের বাবুর্চি, তাকে রান্নায় সহযোগীতা করার জন্য সখিনা বুয়া, দারোয়ান প্লাস ড্রাইভার সামাদ আর শায়লা রহমানের গ্রামের চাচাতো ভাই মন্টু। এছাড়াও উনার মেয়ে শাওলিন ভোরে কোচিং এ গেছে। আসবে দুপুরে। এদের কেউ একজন ভেঙেছে ফুলদানীটা। কিন্তু কেউ স্বীকার করছে না। কিছুক্ষণ চুপ করে ভাবলেন শায়লা রহমান। তারপর পুলিশকে কল দিলেন। এই কালপ্রিট উনি বের করেই ছাড়বেন। যেকোনো মূল্যে। উনার এতো শখের ফুলদানি। এই বাসার প্রতিটা মানুষ জানে জিনিসটা উনার কত পছন্দের। তারপরও যে এই কাজটা করেছে তাকে শায়লা রহমান কঠিন শাস্তি দিবেন৷
.
আসলাম হক অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার। এ পর্যন্ত বহু কেস সলভ করেছেন৷ উনার স্পেশালিটি হলো ইন্টারগেশন ফিল্ডে। অপরাধীকে জেরা করে করে তার মুখ থেকে কথা বের করতে আসলাম হকের জুড়ি নেই।
আসলাম হক রুমে ঢুকেই শায়লা রহমানকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফুলদানিটা ঠিক কিভাবে ভাঙা হয়েছে বলে আপনার মনে হয়? এটা কোনোভাবে শোকেসের ওপর থেকে পড়ে গিয়েও ভেঙে থাকতে পারে, তাইনা?
‘না স্যার, মাথা নাড়লেন শায়লা রহমান। কেউ এটা ইচ্ছা করেই করেছে আমি শিওর।’
– কিভাবে এতো শিওর হলেন?
– আপনি ড্রয়িংরুমে গেলেই পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন৷ কেউ একজন ফুলদানিটা দিয়ে আমার হাজবেন্টের মাথায় আঘাত করে ফুলদানি ভেঙেছে। আমার হাজবেন্টের লাশও পড়ে আছে ঐঘরে। ফুলদানির ভাঙা দুয়েক টুকরা তার রক্তাক্ত মাথার সাথে লেগে আছে।
‘আই সি, তাহলে তো মনে হচ্ছে কেউ ইচ্ছা করেই কাজটা করেছে। আপনার স্বামীর লাশটা কি সরানো হয়েছে?’
– না ওখানেই আছে।
– গুড, আমাদের তদন্তের কাজে লাশটা লাগতে পারে। ধারণা করছি লাশের গায়ে যে ফুলদানি ভেঙেছে তার হাতের ছাপ থাকতে পারে।
.
এই পর্যায়ে শায়লা রহমান ফুপিয়ে কেঁদে দিলেন৷ কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘কে আমার এমন ক্ষতি করলো। এই ফুলদানিটা ছিলো আমার কলিজার একটা অংশ। যে এটা ভেঙেছে আমি তাকে কোনোদিন ক্ষমা করব না। কোনোদিন না।’
আসলাম হক সান্ত্বনা দিলেন। বললেন, ‘আপনি একদম ভেঙে পড়বেন না মিসেস রহমান। ফুলদানির সাথে আপনার ইমোশনাল এটাচমেন্টটা আমরা বুঝতে পারছি৷ আমি এই বাড়ির সবাইকে জেরা করতে চাই। আশাকরি ফুলদানি ভাঙার আসল অপরাধী ধরা পড়বে।’
.
শায়লা রহমান ক্লান্ত গলায় বললেন, ‘তাতে আর কি হবে। ফুলদানিটা তো ফিরে পাবো না। যেটা ভেঙে যায় সেটা কি আর কখনোই ফিরে পাওয়া যায়!’
.
আসলাম হক প্রথমে জেরা করলেন সখিনা বুয়াকে৷
জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি প্রথম কখন ভাঙা ফুলদানিটা দেখ?’
– সাহেব, আমি আর ড্রাইভার সামাদ ভাই দোতলার রুমে লুকায়ে লুকায়ে সেক্স করতেছিলাম। ম্যাডাম ঘুম থেকে উঠার আগে প্রতিদিন আমরা এই কাজ করি। হঠাৎ ম্যাডামের চিল্লানি শুনে তাড়াতাড়ি উঠে শাড়িটা পরেই এক দৌড়ে নিচে আসি। এসে এই ঘরে ঢুকে দেখি বড় সাবের লাশ পড়ে আছে। রক্ত ঘর ভরা। আমি তখনও বুঝিনি ম্যাডাম কেন চিল্লাইছে। চিল্লানোর মত কি এমন দেখছে উনি এই ঘরে? তখন আমার চোখে পড়ে ফুলদানিটা ভেঙে গেছে৷ জিনিসটা দেখে আমার আরেকটু হলে হার্টফেল হচ্ছিল। এতো ভয় আমি কুনোদিন পাইনি এর আগে৷ আমি জানি ঐডা ম্যাডামের জানের জান। কে যে এমন কামডা করলো, আহারে! তার মনে কি একটুও মায়াদয়া নাই?’
– তুমি কাউকে সন্দেহ করো?
– নাহ, তেমন কাউরেই তো দেখিনা। ম্যাডামের ফুলদানির ওপর কারো শত্রুতা থাকতে পারে বলে আমার হয়না।
– লাস্ট কখন তুমি ফুলদানিটা দেখেছ?
– কাল রাতেই দেখছি। বড় সাব মানে আমাদের ম্যাডামের বর ফুলদানিতে নতুন ফুল রাখতেছিলো৷ তখন দশটা এগারোটা বাজে৷ একদম আস্ত ফুলদানি ছিলো। আর এখন দশ টুকরা। আহারে, কখন কোন জিনিস ভেঙে যায় আগে থেকে কিচ্ছু বুঝা যায় না।
– আচ্ছা এখন তুমি আসতে পারো।
– কি কন সাহেব, আমি তো আপনার সামনেই। আর ক্যামনে আসবো।
– আই মিন, তুমি এখন যেতে পারো।
.
এরপর রমিজ বাবুর্চি,
– ফুলদানিটা ভাঙার আগে তুমি কোথায় ছিলে?
– আমি ছোট আপা মানে শাওলিন আপার বাথরুমে গোপন ক্যামেরা সেট করেছি। সারারাত যা যা ক্যামেরায় আসে, সকালে উঠে সেগুলোর ভিডিও দেখি। আজকেও দেখতেছিলাম, এমন সময় ম্যাডামের আওয়াজ আসে। আমি তাড়াতাড়ি কম্পুটার অফ করে দৌড়ে গিয়ে দেখি ফুলদানি ভাঙা।
– গোপন ভিডিও তুমি কতদিন ধরে দেখছ?
– এই ধরেন প্রায় এক বছর হতে চলল?
– কখনো সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়েছে?
– নাহ, বাথরুমে হেই খালি গুসল করে আর হাগে। সন্দেহজনক কিছুই দেখিনি।
– আই সি, এবাড়িতে কারো ওপর সন্দেহ আছে তোমার?
– জ্বে স্যার, ম্যাডামের চাচাতো ভাই মন্টুর লগে ম্যাডামের ঝগড়া আছিলো৷ হে ম্যাডামের ক্ষতি করবার পারে।
.